মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

৯০ দশকের খেলাধুলা...


ধরুন আজ ক্রিকেট খেলায় যার কাছে ভালো ব্যাট আছে সে আসেনি। তাই খেলাটাও জমছে না। কিন্তু ৯০ দশকের উত্তেজনাপ্রিয় ছেলেরা কি আর বসে থাকবে। তাই তারা খুঁজে বের করেছিল সাতচারা কিংবা পিট জ্বালান্তিস এর মত খেলা। কিংবা টিফিনের ফাঁকে লুকোচুরি, ছোঁয়াছুঁয়ি, রুমাল চোর খেলা। অথবা বন্ধুদের সাথে দুপুর লাটিম ঘোরানো বা মার্বেল খেলা ছিল ৯০ এর দশকের শিশুদের নেশা।

সাতচারা


এ খেলায় দুটি দল ভাগ হয়ে যেত। প্রতিটা দলে সমান সংখ্যক প্লেয়ার থাকত। একটি ইটের উপর সাতটি সমতল চারা (পাথর বা ইটের সমতল টুকরো অথবা টাইলসের টুকরো) বসিয়ে বল দিয়ে মারা হত। ইটের অপর পাশে ক্রিকেট খেলার মত একজন কিপার থাকত। খেলার নিয়ম ছিল যে দল বল দিয়ে চারাতে মারবে তাদের লক্ষ হবে বিপক্ষ দলকে ফাঁকি দিয়ে সেই চারাগুলো পুনরায় আগের অবস্থায় নিয়ে আসা। যদি তারা পুনরায় আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে সফল হয় তবে সেই দল এক পয়েন্ট পাবে। কিন্তু তারা যদি না পারে, অর্থাৎ বিপক্ষ দল যদি তাদের শরীরে আগেই বল ছুঁড়ে লাগাতে পারে তাহলে সে দল এক পয়েন্ট পাবে এবং পরবর্তীতে চারা সাজানোর সুযোগ তারা পাবে। খেলা সীমানা হবে নির্ধারিত।

লুকোচুরি



৯০ এর দশকে প্রচুর লোডশেডিং হত। অসীম উদ্ভাবনীক্ষমতাসম্পন্ন ছেলে মেয়েরা সে সময়টুকু নষ্ট করত না। তারা এই সময় লুকোচুরি খেলত। এর সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম ছিল টিলো-এক্সপ্রেস। ভাগ করে একজন চোর হবে বাকি সবাই বিভিন্ন জায়গায় লুকোবে। চোরের কাজ হবে সেই অন্ধকারের মধ্য থেকে সবাইকে খুঁজে বের করা। যাকে খুঁজে বের করবে তার নাম ধরে বলতে হবে এক্সপ্রেস (যেমন মেহেদী এক্সপ্রেস) কিন্তু চোরকে যদি লুকায়িত কেউ এসে টিলো বলে ছুঁতে পারে তাহলে সে আবার চোর হবে। কিন্তু চোর যদি সবাইকে বের করতে সক্ষম হয় তাহলে প্রথম যাকে বের করেছে সেই হবে চোর।

লাটিম ঘোরানো



একসময় নিত্যনতুন লাটিম ঘোরানো ছিল ৯০ দশকের শিশুদের নেশা। লাটিমের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার নাম ছিল ঝিম-কোপ। তখন লাটিম পাওয়া যেত সস্তায়। দু টাকা, তিন টাকা বা পাঁচ টাঁকায় একটা লাটিম বিক্রি হত।

পিট জালান্তিস:
এই খেলাটি বোম-বাস্টিং নামেও পরিচিত। কোন নিয়ম-কানুন বা দলের কোন বালাই নেই এই খেলায়। যে যার গায়ে যত জোরে বল মারতে পারে। তবে বল ধরার সাথে সাথে যে বল ধরা ব্যাক্তিকে ছুঁতে পারবে তার গায়ে বল ধরা ব্যাক্তিটি মারতে পারবে না এবং সব খেলোয়াড়কেই একটি নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে থাকতে হবে।

মার্বেল



৯০ এর দশকে বাবা-মায়ের কাছে সবচেয়ে গর্হিত অপরাধ ছিল মার্বেল খেলা। কোন এক বিচিত্র কারণে তারা ছেলেদের মার্বেল খেলাটা পছন্দ করতেন না। তবুও নিশানাবাজির এক অদ্ভুত নেশায় বুদ হয়ে থাকত তখনকার শিশু-কিশোররা।

রূমালচোর:  


৯০ এর দশকে জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে রূমালচোর। যথারীতি ভাগাভাগি হয়ে একজন চোর হবে। তারপর সবাই গোল হয়ে বসবে। রূমাল চোরের হাতে থাকবে একটা রূমাল। সেই রূমাল নিয়ে সে গোল হয়ে বসা অন্য খেলোয়াড়দের পেছনে ঘুরতে থাকবে। একসময় তার ইচ্ছামত একজনের পিছে রূমাল দিয়ে সে ঘুরে যদি আবার তাকে ধরতে পারে তাহলে সে হবে পরবর্তী চোর। কিন্তু যার পেছনে রূমাল রাখা হয়েছে সে যদি ধরতে পারে সেই চোরকে তাকে ছোঁয়ার আগে বা তার জায়গায় বসার আগে ধরতে পারে তবে তাকে পুনরায় চোর হতে হবে।  

খেলাধুলার সেই উত্তেজনা, উদ্দীপনা দখল করেছে মোবাইল বা কম্পিউটার গেমস। যা শিশু  ও কিশোরের শারীরিক গঠন তৈরিতে অন্তরায়। 

৯০ দশকের গেমস...


আজকের দিনে কাউকে যদি ভিডিও গেমসের কথা জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে সে হয়তো ফিফা কিংবা কম্পিউটারের হাই রেজুলেশনের কোন গেমসের নাম বলবে। কিন্তু বর্তমানে এই হাই রেজুলেশনের গেমসগুলো যে বিবর্তনের ফলে সৃষ্ট তার ভিত্তি ছিল ৯০ দশকের গেমসগুলো। বর্তমানে কম্পিউটারে বসে বা মোবাইলে খেলার জন্য গেমসগুলো ছিল না। গেমস খেলার জন্য যেতে হত দোকানে। স্কুল পালানোর পর কোন কারণে ক্রিকেট খেলা না হলে ৯০ দশকের কিশোরদের গন্তব্য ছিল গেমসের দোকান। এক টাকার কয়েনে খেলা যেত যতক্ষণ না নায়কের লাইফ শেষ হচ্ছে। 

ক্যাডিল্যাকস অ্যান্ড ডাইয়ানোসরাস (মোস্তফা):



আসল নাম বললে হয়তো ক্যাপকমের তৈরি এই গেমসটিকে অনেকেই চিনতে পারবেন না। কিন্তু যদি মোস্তফা নামে ডাকা হয় তাহলে ১৯৯৩ সালে তৈরি গেমসটিকে সবাই এক নামে চিনবে। ৯০ এর দশকে শিশু-কিশোরদের কাছে এক কয়েনে মোস্তফার গেমওভারকারী পেত এভারেস্টজয়ীর মর্যাদা। গেমসটির প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয় জাপানী উপন্যাস জেনোজয়িক টেলস অবলম্বনে। যেখানে কুখ্যাত সব ডাইনোসর ব্যাবসায়ীদের বিপক্ষে লড়তে হয় গেমারকে। গেমারকে লড়তে হয় মোস্তফা, হেনা, জ্যাক বা ম্যাশ এর চরিত্রে। দুর্দান্ত সব ধাপ পার হতে ব্যাবহার করা হয় অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। তিনজন গেমার একসাথে মোস্তফা খেলার সুযোগ পেত। এখনও মোস্তফা খেলা কেউ যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় গেমসের দোকান পড়ে যায় তাহলে দু এক কয়েন অবশ্যই খেলে যায়।

দ্যা কিং অফ ফাইটার (নাইনটি সেভেন বা টু থাউজেন্ড টূ):


দ্যা কিং অফ ফাইটার সংক্ষেপে কেওএফ। ১৯৭৪ সালে তৈরি এসএনকে কোম্পানির গেমসটির দুটি ভার্সন বাংলাদেশে বহুল পরিচিত। একটি গেমস পরিচিত নাইনটি সেভেন নামে এবং অপরটি টু থাউজেন্ড টু নামে পরিচিত। ফাইটিং গেমস হিসবে এর ব্যাপক চাহিদা ছিল তৎকালীন গেমারদের মধ্যে। কে কার কত কয়েন খেতে পারে অর্থাৎ কে কাকে কতবার হারাতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলত গেমারদের মধ্যে। গেমসের প্লেয়ারদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল কাইয়ু, পাগলা, লাস্ট বস। প্রতিযোগিতা চলত কে কার কোন স্পেশাল পাওয়ারটা ভালো মারতে পারে। তবে বর্তমানে গেমসের নতুন ভার্সন প্লে স্টেশন ৪ এ মুক্তি দেয়ার ফলে এখন অত চাহিদা দেখা যায় না।

স্ট্রীট ফাইটার:



জনপ্রিয় গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাপকমের তৈরি স্ট্রীট ফাইটারকে ভাবা হয় কিং অফ ফাইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে। গোটা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও এই গেমটি জনপ্রিয় ছিল। তাকাশি নিশিমিয়া ও হিরোশি মাতসুমুতোর তৈরি গেমটিতে মার্শাল আর্ট জানা রাইয়ুর ভুমিকায় খেলতে হত গেমারকে। ৫ টি দেশের ১০ জন খেলোয়াড়দের বিপক্ষে মার্শাল আর্টে অংশ নিতে হত গেমারকে। দুইজন একসাথে এই গেমসটি খেলা যেত। দ্বিতীয় গেমারকে কেন চরিত্রে খেলতে হত।

মেটাল স্লাগ:



কিশোরদের চেয়ে শিশুদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় ছিল মেটাল স্ল্যাগ। নাজকা কর্পোরেশনের তৈরি গেমটি একসাথে দুজন খেলতে পারত। গুলি করে ট্যাংক, আর্মি, প্লেন ধ্বংস করে সামনে এগিয়ে যাওয়াই ছিল গেমটির লক্ষ।

অ্যারো ফাইটার



বহু শিশু-কিশোরদের বড় হয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পাইলট হবার সপ্ন লালন করেছে এই গেমটি। ১৯৯২ সালে গেমটি তৈরি করে ভিডিও সিস্টেম নামের একটি কোম্পানি। কন্ট্রোলে বসে জঙ্গিবিমানের পাইলট হবার স্বাদ নিতে বহু শিশু কিশোরের পছন্দের তালিকায় ছিল গেমটি।

বর্তমানে অনেক রেজুলেশনের গেমগুলো হয়তো আপনাকে আরও জীবন্ত ও প্রাণবন্ত খেলার অভিজ্ঞতা দেবে। কিন্তু দোকানে বন্ধু মিলে খেলার অভিজ্ঞতাটা আসলেই অন্যরকম 

৯০ দশকের কমিকস...


বইয়ের ফাঁকে লুকিয়ে কমিকস পড়া ছিল ৯০ দশকের শিশু-কিশোরদের জন্য একটি রোমাঞ্চকর বিষয়। যার অধিকাংশই ছিল ভারতীয় কমিকসের বাংলা অনুবাদ। স্কুল ফাঁকি দিয়ে নীলক্ষেত থেকে কম দামে কেনা ডায়মন্ড কমিকসগুলো হয়ে উঠত ডায়মন্ডের মতই অমূল্য। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে পড়া হত ভারতীয় কার্টুনিস্ট প্রান কুমার শর্মার তৈরি করা চাচা চৌধুরী, বিল্লু, পিংকি, রমণ ও শ্রীমতিজীর কীর্তিকলাপ। এর বাহিরে জনপ্রিয় ছিল অগ্নিপুত্র অভয়, লম্বু মোটু, হী-ম্যন এর কমিকস।

চাচা চৌধুরী:




কম্পিউটারের চেয়ে প্রখর মগজের অধিকারী ছিলেন চাচা চৌধুরী। তার লাল পাগড়ীর আর সাদা গোঁফ ৯০ দশকের শিশু-কিশোরদের মনে থাকবে বহুদিন। তার যোগ্য সঙ্গী ছিল জুপিটার অধিবাসী শক্তিশালী সাবু। বুদ্ধি ও শক্তির অপূর্ব এ সমন্বয় আমাদের মোহাবিষ্ট করে রাখত অনেকটা সময়। জনপ্রিয় ছিল চাচা চৌধুরীর পোষা কুকুর ও গাড়ি ডগডগ। আর তাদের প্রধান শত্রু অমর রাকার নতুন কমিকসের অপেক্ষায় কাটত তখনকার দিনগুলো।

বিল্লু: 





কিশোর হিরো হিসেবে পরিচিত ছিল বিল্লু। তার প্রধান সঙ্গী, শত্রু ছিল বজরংগী। বিল্লু আর বজরংগীর কাণ্ড-কারখানা মাতিয়ে রাখত শিশু কিশোরদের। বিল্লুকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল এ যেন প্রান কমিকস পরিবারের বড় ছেলে।

পিংকিঃ 



বিল্লু যদি পরিবারের বড় ছেলে হয় তাহলে পিংকি প্রান পরিবারে ছোট মেয়ে। ৯০ দশকের মেয়ে শিশুদের মধ্যে জনপ্রিয় কমিকস চরিত্র ছিল পিংকি। তার মাথার ব্যান্ড ও চুলের স্টাইল অনেক শিশুদের জন্য আদর্শ ছিল। জনপ্রিয় ছিল তার পোষা কাটবিড়ালী কুটকুট।

রমণ:  

 

এক ছাপোষা ভদ্রলোকের গল্প পাওয়া যায় রমণ নামক কমিকসে। সেই ছাপোষা লোকের বিভিন্ন মজাদার কাহিনী, ইচ্ছাকে ঘিরেই এগিয়ে যায় কমিকসের কাহিনী।

শ্রীমতিজী:  



প্রান কুমার শর্মা তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন এই শ্রীমতিজীর চরিত্রটি দিয়েই। একটি পত্রিকায় নিয়মিত বের হত শ্রীমতিজী। পরবর্তীতে সেটি কমিকসে পরিণত করা হয়। এটি রমণের ঠিক উল্টো। একজন ছাপোষা রমণীর ঘর-বাহিরের মজাদার গল্প থাকত শ্রীমতিজীতে।

হী-ম্যান:  




বাজারে প্রচলিত কমিকসের তুলনায় একটু ছোট এবং দামে কম ছিল হী-ম্যানের কমিকস। কিন্তু এর চাহিদা ছিল আকাশচুম্বী। ভারতবর্ষের বাইরের কমিকসের সাথে প্রথম পরিচিতি এই হী-ম্যান দিয়েই। টিভির প্রথম সুপার হিরো যদি সুপারম্যান হয় তাহলে কমিকসের প্রথম হিরো হি-ম্যান। যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল হী-ম্যানের তলোয়ার। আর হী-ম্যানের প্রধান শত্রু স্কেলিটরের সাথে যুদ্ধ পড়তে পড়তে ভুলে যেতাম টেক্সট বইয়ের কথা।

বই পড়ার অভ্যাস বা নেশা আমাদের তৈরি করার পেছনে এই কমিকস এর অবদান অনেক। এই কমিকসই ভবিষ্যতে গল্প, কবিতা, উপন্যাস পড়ার তাগিদ দিয়েছে।

সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬

৯০ দশকের কার্টুনসমূহ


কার্টুন নেটওয়ার্ক কিংবা পোগো বর্তমানে এই দুই চ্যানেলে সর্বাধিক বেশি কার্টুন দেখে বাংলাদেশের শিশু কিশোররা। পোকেমন, ডোরেমন, বেন-টেন কার্টুনগুলো আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনার শিকার। অথচ ৯০ এর দশকের শিশুদের কার্টুনগুলো শুধুমাত্র শিশু-কিশোর নয়, বড়দের মাঝেও ব্যাপক পরিচিত ছিল। একটি কার্টুন ছিল অপরটির থেকে ভিন্ন। বর্তমানে সারাদিন কার্টুন দেখার জন্য হয়তো মা-বাবা বকা দেন, কিন্তু ৯০ এর দশকে কার্টুন দেখার সময়টুকু একমাত্র টেলিভিশনটি পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্যের জন্য বরাদ্দ ছিল।

গডজিলাঃ



মঙ্গলবারটি প্রকৃতপক্ষে মঙ্গলবার হয়ে উঠত না যতক্ষণ পর্যন্ত গডজিলা না দেখা হয়ে উঠত। দুপুরের আগেই অপেক্ষা বাড়ত গডজিলার জন্য। কল্পনার ডাইনোসরের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে বিভিন্ন অসাধ্য সাধন করাটা দেখতে পাওয়া যেত এই কার্টুনটিতেই। পরবর্তীতে জাপানিজ স্টুডিও গডজিলা নিয়ে সিনেমা তৈরি করলেও ৯০ দশকের সেই গডজিলার আবেদন এখনও শেষ হয়ে যায়নি।


জুমানজি:


বুধবার ছিল অ্যালেন, পিটার, জুডির সাথে সময় কাটানোর। হলিউডের নির্মিত সিনেমা জুমানির চাইতে কার্টুন জুমানজির আবেদন কোন অংশে কম ছিল না। পাশাপাশি এই কার্টুনের ভিলেনগুলো ছিল মনে রাখার মত। প্রফেসর ইবসেন, ট্রেডার সিল্ক, ভান পেল্টদের কাজই ছিল অ্যালেন, পিটার, জুডিকে বিপদে ফেলা। কার্টুনের শেষ পর্বে অ্যালেন তার শেষ ক্লুটি  সমাধান করে বাড়ি ফিরে যায়। এরপর আর কখনও অ্যালেন, পিটার, জুডির একসাথে জুমানজি বোর্ডের উপর দুইটি ছক্কা নিক্ষেপ করা হয়নি।

উডি উড পেকার:



মিকি মাউস, বাগস বানি,  টম অ্যান্ড জেরির মত অতটা জনপ্রিয় না হলেও উডি উড পেকারের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে কার্টুনপ্রেমী শিশু-কিশোরদের মধ্যে। উডি উড পেকারের হাসি এখনও জনপ্রিয় শিশুদের মাঝে। সোমবারের আলাদা মজাই ছিল বিটিভির এই কাঠ-ঠোকরার ঠোকাঠোকি

ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট:

“Captain planet, he is the hero take pollution down to zero”


আপনাকে মেনে নিতে হবেই, যখনই আপনি ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট এর কথা মনে করবেন তখন আপনার কানের মধ্যে উপরের গানটি বাজতে থাকবে। আগুন, পানি, মাটি, বাতাস, হৃদয় এই পঞ্চশক্তির অপূর্ব সমন্বয়ে তৈরি হত হিরোদের সাথে নিত্য ওঠা বসা তবুও ৯০ দশকের শিশু কিশোরদের জন্য একটাই সুপার হিরো ছিল যার নাম ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটতখনকার সময়েই পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করা, পরিবেশ বাঁচানোর জন্য ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট এর উদ্যোগগুলো আমাদের ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট। যদিও মারভেল বা ডিসি কমিকসের সুপারম্যান, ব্যাটম্যান, আয়রনম্যান সহ অন্যান্য সুপার ভবিষ্যৎ পরিবেশবাদী হতে শিখিয়েছে।

মীনা



যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয় আপনার দেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা কার্টুন কোনটি, আপনার উত্তর নিঃসন্দেহে মীনার দিকেই যাবে। ইউনিসেফের অর্থায়নে তৈরি করা এই কার্টুনটি শুধু বাংলাদেশেই নয় দক্ষিন এশিয়ার কয়েকটি দেশে অনেক জনপ্রিয়। বিনোদনের পাশাপাশি বিভিন্ন জনসচেতনতা, নারীশিক্ষা,  স্বাস্থ্যসচেতনামুলক তথ্য আমরা পেয়েছি মীনাতে। যা বর্তমান কার্টুনগুলোতে অনুপস্থিত।

ছোটবেলার সেই কার্টুনগুলো নতুন কার্টুনের ভিড়ে হারিয়ে গেলেও, ৯০ দশকের শিশু-কিশোরদের মধ্যে এখনও সেই স্মৃতি অমলিন। 

৯০ দশকের কিশোর ধারাবাহিকগুলো...




আজকের দিনে যদি কেউ বিটিভি দেখতে বসে তাহলে ধরে নিতে হবে আজ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোন খেলা আছে অথবা আজকে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি হবে। অথবা কেবল লাইন সংযোগটি সাময়িক সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অথচ একসময় শিশু-কিশোরদের মধ্যে একধরনের আলোড়ন পড়ে যেত টিভির সিরিয়াল দেখার জন্য।
রাত আটটা বাংলা সংবাদ শেষ হলেই পড়ার বই, লেখার খাতা বন্ধ করে দেখতে বসে যেত আলিফ লায়লা, সিনবাদ, রবিনহুডের মত জনপ্রিয় বিদেশি ধারাবাহিকগুলো। চমক থাকতো দশটার ইংরেজি সংবাদের পরেও। তখন ছিল হারকিউলিস, এক্স ফাইলের হাজির হওয়ার সময়। জনপ্রিয় ছিল ম্যাকগাইভার রোবোকপের মত ধারাবাহিকগুলো। সেই উত্তেজনা বর্তমান যুগের শিশুরা পাচ্ছে না। আসুন মনে করি সেই জনপ্রিয় ধারাবাহিকগুলো।

আলিফ লায়লা (দ্যা অ্যা রাবিয়ান নাইটস, এক হাজার এক রাত্রি) 


আলিফ লায়লা দিয়ে লেখা শুরু করার একটি কারণ আছে। যদি জনপ্রিয়তা বিচার করা হয় তাহলে শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল সাগর ফিল্মসের তৈরি আলিফ লায়লা। ডিডি ন্যাশনাল এবং এ আর আই ডিজিটালে চলা তুমুল জনপ্রিয় এই ধারাবাহিকটি ডাবিং করে চলত বিটিভিতে। আলিবাবা, আলাদিন, সিনবাদ, খলীফা হারুন অর রশিদ, তিন কালান্দার ইত্যাদি গল্পগুলো শিশু মনে বিস্তার করত। শিশুদের কল্পনার দুয়ার এই কাহিনীগুলোর মাধ্যমেই খুলে যেত। আলিফ লায়লার বেশকিছু কাহিনী শিক্ষণীয়ও ছিল। এছাড়া আলিফ লায়লার বিভিন্ন চরিত্র অনুসারে বিভিন্ন প্লাস্টিক ও টিনের তৈরি বিভিন্ন খেলনাও পাওয়া যেত। যেমন সুলেমানী তলোয়ার, বিচ্ছু ইত্যাদি।

দি অ্যাডভেঞ্চার অফ সিনবাদ:



যদিও অ্যারাবিয়ান নাইটস এর একটি অংশ সিনবাদ, তবে পৃথক ধারাবাহিক হিসেবে এটিও শিশুকিশোরদের মনে দাগ কেটে গেছে। ছেলেবেলার যত সাহসিকতা, দস্যিপনা তার কিছুটা যে সিনবাদ ধারাবাহিক থেকে নেয়া তা বলাটা বোধহয় ভুল হবে না। কানাডায় নির্মিত সিরিয়ালটির প্রধান চরিত্র সিনবাদই যে শুধু জনপ্রিয় ছিল তা নয়। তার সঙ্গী রঙা, ফিরোজ, ডুবারও শিশুদের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল।  

হারকিউলিস

 
দেবতা জিউসের পুত্র আগে দেখা করতে আসত শনিবার রাত দশটার ইংরেজি সংবাদের পর। দুর্দান্ত সব পর্বে মাতিয়ে রাখত শনিবারের রাত। যদিও এটি একটি পৌরাণিক কাহিনী। তবে আনন্দদানের উদ্দেশ্যে  এর সাথে আরও কিছু কাহিনী যোগ করে তৈরি করা হয় ধারাবাহিকটি।

রবিনহুড: 



ছোটবেলায় তীর-ধনুকের সাথে প্রথম পরিচিতি এই রবিনহুড ধারাবাহিক দিয়েই। রবিনহুডের অসাধারণ নিশানাবাজি আমাদেরও মনে প্রভাব ফেলত। রবিনহুড আমাদের শিখিয়েছিল কিভাবে গরিবের উপকারে নিজেদের তুলে ধরতে হয়। কিভাবে অসহায়দের পাশে দাড়াতে হয়।

রোবোকপ:


বড় হওয়ার আগ পর্যন্ত রোবট মানেই রোবোকপকে বুঝত এখনকার শিশু-কিশোররা। অন্যান্য ধারাবাহিকে কল্পনার রাজ্যে বিচরণ থাকলেও এতে কিছুটা বাস্তবতার মিশেল ছিল। রোবোকপের পায়ের মাঝখান থেকে রিভলবার বের করা সেই স্টাইল আজও অনুকরণীয়। ম্যাকগাইভার ছুরির মতই বাজারে ব্যাটারি চালিত খেলনা রোবোকপ ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল।

ম্যাকগাইভার:            



কোন অস্ত্র ছাড়া শুধু বুদ্ধি দিয়েও যে শত্রুকে পরাস্ত করা যায় তা ছোটবেলায় আমরা শিখেছি ম্যাকগাইভারের কাছ থেকে। বুদ্ধি ও কৌশলের অপূর্ব সমন্বয় ছিল ম্যাকগাইভার। কিশোরদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল এই ধারাবাহিকটি। আরও জনপ্রিয় ছিল সুইস আর্মির তৈরি করা চাকু। যেটা ম্যাকগাইভার চাকু হিসেবে সুপরিচিত ছিল। যা দিয়ে ধারাবাহিকে নানা অসাধ্য সাধন করতেন ম্যাকগাইভার স্বয়ং।

এক্স ফাইলস:



তখনকার সময় ভৌতিক ধারাবাহিক বলতে আমরা এক্স ফাইলসকেই বুঝতাম। দ্যা ট্রুথ ইজ আউট দেয়ার এই শিরোনামে আমাদের কাছ হাজির হত এক্স ফাইলস। যদিও এটি বাংলায় ডাবিং করা ছিল না তবুও একটু ভয়ের স্বাদ নিতে লুকিয়ে তখনকার শিশু-কিশোররা এক্স ফাইলস দেখতে বসে যেত।

বর্তমানে অনেক বিদেশি সিরিয়াল দেখা হয় কিন্তু সেরকম রোমাঞ্চ হয়তো খুঁজে পাওয়া যায়না। ধারাবাহিকের পরবর্তী পর্বের প্রতীক্ষা হয়না বহুদিন।