ধরুন আজ ক্রিকেট খেলায় যার কাছে ভালো ব্যাট আছে সে আসেনি। তাই খেলাটাও জমছে না। কিন্তু ৯০ দশকের উত্তেজনাপ্রিয় ছেলেরা কি আর বসে থাকবে। তাই তারা খুঁজে বের করেছিল সাতচারা কিংবা পিট জ্বালান্তিস এর মত খেলা। কিংবা টিফিনের ফাঁকে লুকোচুরি, ছোঁয়াছুঁয়ি, রুমাল চোর খেলা। অথবা বন্ধুদের সাথে দুপুর লাটিম ঘোরানো বা মার্বেল খেলা ছিল ৯০ এর দশকের শিশুদের নেশা।
সাতচারা:
এ খেলায় দুটি দল ভাগ হয়ে যেত।
প্রতিটা দলে সমান সংখ্যক প্লেয়ার থাকত। একটি ইটের উপর সাতটি সমতল চারা (পাথর বা
ইটের সমতল টুকরো অথবা টাইলসের টুকরো) বসিয়ে বল দিয়ে মারা হত। ইটের অপর পাশে
ক্রিকেট খেলার মত একজন কিপার থাকত। খেলার নিয়ম ছিল যে দল বল দিয়ে চারাতে মারবে
তাদের লক্ষ হবে বিপক্ষ দলকে ফাঁকি দিয়ে সেই চারাগুলো পুনরায় আগের অবস্থায় নিয়ে
আসা। যদি তারা পুনরায় আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে সফল হয় তবে সেই দল এক পয়েন্ট পাবে।
কিন্তু তারা যদি না পারে, অর্থাৎ বিপক্ষ দল যদি তাদের শরীরে আগেই বল ছুঁড়ে লাগাতে
পারে তাহলে সে দল এক পয়েন্ট পাবে এবং পরবর্তীতে চারা সাজানোর সুযোগ তারা পাবে। খেলা
সীমানা হবে নির্ধারিত।
লুকোচুরি:
৯০ এর দশকে প্রচুর লোডশেডিং হত। অসীম উদ্ভাবনীক্ষমতাসম্পন্ন ছেলে মেয়েরা সে সময়টুকু নষ্ট করত না। তারা এই সময় লুকোচুরি খেলত। এর সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম ছিল টিলো-এক্সপ্রেস। ভাগ করে একজন চোর হবে বাকি সবাই বিভিন্ন জায়গায় লুকোবে। চোরের কাজ হবে সেই অন্ধকারের মধ্য থেকে সবাইকে খুঁজে বের করা। যাকে খুঁজে বের করবে তার নাম ধরে বলতে হবে এক্সপ্রেস (যেমন মেহেদী এক্সপ্রেস) কিন্তু চোরকে যদি লুকায়িত কেউ এসে টিলো বলে ছুঁতে পারে তাহলে সে আবার চোর হবে। কিন্তু চোর যদি সবাইকে বের করতে সক্ষম হয় তাহলে প্রথম যাকে বের করেছে সেই হবে চোর।
লাটিম ঘোরানো:
একসময় নিত্যনতুন লাটিম ঘোরানো ছিল ৯০ দশকের শিশুদের নেশা। লাটিমের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার নাম ছিল ঝিম-কোপ। তখন লাটিম পাওয়া যেত সস্তায়। দু টাকা, তিন টাকা বা পাঁচ টাঁকায় একটা লাটিম বিক্রি হত।
পিট জালান্তিস:
এই খেলাটি বোম-বাস্টিং নামেও
পরিচিত। কোন নিয়ম-কানুন বা দলের কোন বালাই নেই এই খেলায়। যে যার গায়ে যত জোরে বল
মারতে পারে। তবে বল ধরার সাথে সাথে যে বল ধরা ব্যাক্তিকে ছুঁতে পারবে তার গায়ে বল
ধরা ব্যাক্তিটি মারতে পারবে না এবং সব খেলোয়াড়কেই একটি নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে
থাকতে হবে।
মার্বেল:
৯০ এর দশকে বাবা-মায়ের কাছে সবচেয়ে গর্হিত অপরাধ ছিল মার্বেল খেলা। কোন এক বিচিত্র কারণে তারা ছেলেদের মার্বেল খেলাটা পছন্দ করতেন না। তবুও নিশানাবাজির এক অদ্ভুত নেশায় বুদ হয়ে থাকত তখনকার শিশু-কিশোররা।
রূমালচোর:
৯০ এর দশকে জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে রূমালচোর। যথারীতি
ভাগাভাগি হয়ে একজন চোর হবে। তারপর সবাই গোল হয়ে বসবে। রূমাল চোরের হাতে থাকবে একটা
রূমাল। সেই রূমাল নিয়ে সে গোল হয়ে বসা অন্য খেলোয়াড়দের পেছনে ঘুরতে থাকবে। একসময়
তার ইচ্ছামত একজনের পিছে রূমাল দিয়ে সে ঘুরে যদি আবার তাকে ধরতে পারে তাহলে সে হবে
পরবর্তী চোর। কিন্তু যার পেছনে রূমাল রাখা হয়েছে সে যদি ধরতে পারে সেই চোরকে তাকে
ছোঁয়ার আগে বা তার জায়গায় বসার আগে ধরতে পারে তবে তাকে পুনরায় চোর হতে হবে।
খেলাধুলার সেই উত্তেজনা, উদ্দীপনা দখল করেছে মোবাইল বা কম্পিউটার গেমস। যা শিশু ও কিশোরের শারীরিক গঠন তৈরিতে অন্তরায়।
ছবি গুলো দেশীয় হলে ভালো হতো। আরো অনেক খেলা আছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সাতচারা খেলা খুব মিস করি। মিস করি পুরো শৈশব।
উত্তরমুছুনবিদেশি ছবি কেন? আমাদের গ্রাম বাংলার ছবি হলে ভালো লাগতো।
উত্তরমুছুন